Hey, like this? Why not share it with a buddy?
সন্ধ্যা থেকে রাতঃ
৭ অক্টোবর সকাল থেকেই শেরে বাংলা হলে পুলিশ ছিলো এবং যতই সন্ধ্যা হচ্ছিলো পুলিশ ততই বাড়তে থাকে। বিভিন্ন সময়ে প্রভোস্ট পুলিশ নিয়ে বের হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে থাকেন। তখন হল অফিসে প্রভোস্টসহ বিভিন্ন স্যার, পুলিশের উচ্চ পদস্থ দু'এক জন ছিলেন। কিন্তু ছাত্ররা ফুটেজ পাওয়ার আগে প্রভোস্ট স্যার কে এবং পুলিশের উচ্চপদস্থ অফিসারদের যেতে না দেয়ার সিদ্ধান্তে অটল থাকে। এক পর্যায়ে অফিস রুমের পেছনের শিক কেটে বের হওয়ারও চেষ্টা করেন তারা। কিন্তু ছাত্রদের শক্ত অবস্থানের জন্য, তাদের সকল চেষ্টা ব্যর্থ হয়।
সন্ধ্যার দিকে হলের ভিতরে হেলমেট, ভেস্ট পরিহিত অবস্থায় এবং লাঠি হাতে প্রায় ২০০ দাঙ্গা পুলিশ অবস্থান নেয়। তাদেরকে রেডি থাকতে এবং যেকোন সময় ডাকা হবে এই নির্দেশ দিতেও শোনা যায়। ভাবতেও অবাক লাগে, যেখানে হলে বুয়েট অথোরিটির অনুমতি ছাড়া দাঙ্গা পুলিশ ঢুকতেও পারার কথা না, সেখানে দাঙ্গা পুলিশ হলে ঢুকে ছাত্রদের চার্জ করার কথা ভাবছিলো। পুলিশ কখনোই হলে বন্দি ছিলো না, বা আটকে ছিলো না। তারা সম্পূর্ণ বাধাহীন ভাবে যাওয়া আসা করছিলেন, শুধুমাত্র হল অফিসে তাদেরকে ফোর্স নিয়ে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়, কারণ ছাত্রদের দাবিকৃত ফুটেজের কপি ছাত্ররা তখনো পায় নি। শেষে রাত ৮ টার দিকে একযোগে সকল পুলিশ চার্জ করে আসে এবং ছাত্রদের সম্মিলিত বাধা পেয়ে তারা পিছু হটে হলের বাইরে যেতে বাধ্য হন।
এর পরপরই পুলিশ বুঝতে পারে, ছাত্ররা প্রয়োজনে সারা রাত পাহাড়া দিবে, দরকারে নিজেদের রক্ত দিবে, কিন্তু ফুটেজ না উদ্ধার করে প্রভোস্ট স্যার এবং পুলিশের উচ্চপদস্থ কাউকে যেতে দিবে না। অবস্থা বেগতিক দেখে, অবশেষে রাত সাড়ে ৮ টার দিকে সিসিটিভি ফুটেজের এক কপি পুলিশ ছাত্রদের কাছে হস্তান্তর করে। এরপর তারা বিনা বাধায় সকলে হল থেকে চলে যান। এরপর ছাত্ররা আলোচনা করতে থাকে কিভাবে তাদের ভাইয়ের হত্যার বিচার নিশ্চিত করা যায়। এদিকে আবরারের জানাজার সময়ও কাছে আসতে থাকে। অতঃপর রাত ৯ টা ৪৫ এ আবরারের জানাজা বুয়েট সেন্ট্রাল মসজিদে হয়। সারাদিন আন্দোলনে নিজেদের আবেগকে ধরে রাখা আবরারের অনেক বন্ধুকেও তখন ভেঙে পড়তে দেখা যায়। দেড় বছর ধরে একসাথে ক্লাস করা, একসাথে একই রুমে থাকা, একসাথে ট্যুর দেয়া বন্ধুকে এভাবে শেষ বিদায় জানানোর ব্যাপারটা কেউ মেনে নিতে পারছিলো না। তবুও বুকে পাথর রেখে একদিকে যেমন সবাই আবরারকে বিদায় জানাচ্ছিলো, তেমনি আবরারের হত্যাকারীদের যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করার প্রতিজ্ঞা করছিলো মনে মনে।
জানাজার পর বুয়েট ক্যাম্পাসে সাধারন শিক্ষার্থীরা মিছিল করে। এরপর ছাত্ররা সিদ্ধান্ত নেয় যে, পরের দিন সকাল ১০ টায় সময় সবাই বুয়েট ক্যাম্পাসে একত্রিত হবে এবং আন্দোলনের পরবর্তী পদক্ষেপের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিবে। আর এর মধ্যে দিয়েই সমাপ্তি ঘটে বুয়েটের ইতিহাসের সবচেয়ে কলঙ্কিত দিনগুলোর একটির।