Hey, like this? Why not share it with a buddy?
সকাল থেকে দুপুরঃ
৭ অক্টোবর সকালে শেরে বাংলা হলের ব্যাচ’১৭ এর ছাত্রদের পোস্ট দেখে বুয়েটের অন্যরাও হত্যাকান্ড সম্পর্কে জানতে শুরু করে এবং ধীরে ধীরে সবাই শেরেবাংলা হলে একত্রিত হতে শুরু করে। কারো চোখে ছিল ভাই হারানোর অশ্রু, কেউ হয়তো বা বুঝে উঠার চেষ্টা করছিলো কিভাবে তাদের প্রানের ক্যাম্পাসে কারো হত্যা হতে পারে। শুধু একদল পাষাণ কে দেখা যায় শান্তভাবে ঘুরে বেড়াতে, একটা খুন করার পরেও কিভাবে এই পশুরা এতো শান্ত থাকতে পারে এবং গর্ব নিয়ে ঘুরে বেড়াতে পারে, তা সত্যিই অবাক করার মতো।
উপরের তলার ২০১১ এর বারান্দার দরজা খোলা ছিলো, সেখানে তখন ফরেনসিক পুলিশ আলামত সংগ্রহ করছিলো। পাশাপাশি নিচে তখন পুলিশ ভিডিও ফুটেজ চেক করার জন্য প্রোভোস্ট স্যারের রুমের দিকে এগুতে থাকে। কিন্তু ছাত্রদের মনে শঙ্কা জাগতে থাকে যে এই হত্যা কে অন্যদিকে মোড় দেয়ার একটা চেষ্টা হতে পারে। পাশাপাশি একটা খবর চারপাশে প্রচারিত হয় যে, হত্যা কে অন্যদিকে মোড় দেয়ার জন্য আবরারের রুমে মাদকদ্রব্য প্ল্যান্ট করার চেষ্টা হচ্ছে। এই শঙ্কার কারনে ছাত্ররা পুলিশের কাছে আবেদন জানায় যাতে ছাত্রদের কয়েকজনকে ভিডিও ফুটেজ কালেক্ট করার সময় সাথে রাখা হয়। পাশাপাশি ভিডিও এর এক কপি যেনো ছাত্রদের সরবরাহ করা হয়, সেই দাবিও আসে ছাত্রদের থেকে। শুরুতে ছাত্রদের মধ্য থেকে কয়েকজনকে নেয়া হবে বলা হলেও পুলিশ এ নিয়ে টালবাহানা শুরু করে। শুরুতে ১০টা, পরবর্তীতে ১২টায় ছাত্রদের প্রতিনিধি নেয়া হবে বললেও শেষে দুপুরের কিছু পরে কয়েকজনকে আসামী সনাক্তকরনের জন্য নেয়া হয়।
অন্যদিকে, মাদকদ্রব্য প্ল্যান্ট করার খবর ছড়ানোর পর থেকে ছাত্ররা আবরারের রুম ১০১১ কে পাহাড়া দিতে শুরু করে, যাতে কেউ হত্যা কে অন্যদিকে দিক পরিবর্তন করতে না পারে। এরইমধ্যে দুপুরের দিকে যখন ছাত্ররা পুলিশের সাথে নেগসিয়েশনে ব্যস্ত, তখন সবার আগে লক্ষ করা যায়, পুলিশ বুয়েট ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারন সম্পাদক মেহেদি হাসান রাসেল (সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট, ব্যাচ ’১৩) কে ধরে নিয়ে যাচ্ছে।
পরপরই দেখা যায় খুব ধীরস্থিরভাবে পুলিশ কাউকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। একদম শান্তভাবে সবুজ একটা টিশার্ট গায়ে, ট্রাউজারের পকেটে হাত দিয়ে হেঁটে গেলো যেন বিশেষ নিরাপত্তা দিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সবাই তখন ভাবছিলো এমনি জিজ্ঞাসাবাদ করতে হয়তো নিয়ে যাচ্ছে। আরেকজনকে পুলিশ দৌড়ে নিয়ে গাড়িতে উঠলো। এরপরে অন্যজন কালো টিশার্ট গায়ে হাসতে হাসতে বের হয়ে গেলো। ফটোশুটের জন্যে পোজও দিলো ক্যামেরার সামনে। এরা কারা ছিলো? মুহতাসিম ফুয়াদ (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট, ব্যাচ’১৪), অনিক সরকার (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট, ব্যাচ’১৫), হাস্যমুখী মিফতাহুল হক জিয়ন (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট, ব্যাচ’১৫)। সবচেয়ে, সবচেয়ে বড় খুনিগুলার তিনজন। বিকেল বেলায়ই আরো দুই আসামী মুনতাসির আল জেমি (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট, ব্যাচ’১৭) এবং তানভীর খন্দকার (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট, ব্যাচ’১৬) কেও পুলিশ ধরে নেয়া যায়।
অন্যদইকে, ডিএসডব্লিউ স্যার ইতিমধ্যেই হল থেকে চলে যান। ডিএসডব্লিউ এর ভাষ্যমতে তিনি মিডিয়া এড়াতে স্থান ত্যাগ করেন এবং প্রভোস্ট, এসিস্টেন্ট প্রভোস্ট প্রমুখ ব্যক্তি হলের অফিস রুমে থেকে ছাত্রদের সাথে নেগোসিয়েশন চালিয়ে যান।
এদিকে ফুটেজ দেয়ার ব্যাপারে পুলিশের টালবাহানা চলতে থাকে। একবার ১১ টায় ফুটেজ দিবেন, একবার আড়াইটায়, একবার চারটায় নানাভাবে তারা বিভিন্ন সময়ে ফুটেজ দিবেন, বা সবাইকে দিবেন না, কিছু প্রতিনিধিকে শুধু দেখাবেন এসব বলে কালক্ষেপন করেন। এতে ছাত্রদের ক্ষোভ আরো পুঞ্জিভূত হতে থাকে। পাশাপাশি ছাত্রদের মনে এই ভয় আরো ঘনীভূত হতে থাকে যে, হয়তো আসল ভিডিও ফুটেজ সত্যিই বিকৃত করা হয়ে যাবে।
৭ অক্টোবর বিকাল শেষে ছাত্রদের মনে একদিকে যেমন হত্যাকে ধাপাচাপা দেয়ার ভয় কাজ করতে থাকে, তেমনি কয়েকজন হত্যাকারীদের গ্রেফতারের কারনে সেই ভয়ের মাঝেও কিছুটা আশার আলো দেখতে থাকে শিক্ষার্থীরা।